সকল প্রশংসা কেবল আল্লাহর জন্য। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তার পরিবার, সাহাবায়ে কেরাম এবং তার সকল অনুসারীদের উপর।

আজকের আলোচনা বিশেষ করে উম্মাহর ঐ অংশের জন্য, যারা মুসলিম উম্মাহর এই পরাজিত ও লাঞ্ছনার অবস্থাকে ভবিষ্যতে ‘বিজয়' ও ‘সম্মানে' রূপান্তর করতে আগ্রহী।

উম্মাহর এই অংশটি উম্মাহর সামগ্রিক অবস্থার পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরির যোগ্যতা রাখে। জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্যও এই দলটি উপযুক্ত। এই দলটি যদি কুরআনকে আঁকড়ে ধরতে পারে, চলমান সংঘাতের কারণ ও প্রকৃতি বুঝতে পারে, মতানৈক্য, ফ্যাসাদ ও ব্যক্তি কেন্দ্রিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা  অতিক্রম করতে পারে এবং সর্বক্ষেত্রে ইসলামের অনুশাসন মেনে চলতে পারে – তবে আল্লাহর ইচ্ছায় বিজয় তাদের সঙ্গী হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ। 

উম্মাহর অবস্থার পরিবর্তনের এই বিপ্লবে যোগ্য নেতৃত্ব লাগবে। এই নেতৃত্বের শরিয়তের মূলনীতিসমূহ সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান থাকতে হবে। চলমান সংঘর্ষের প্রকৃতি ও ময়দানের বাস্তবতা বুঝতে হবে। উম্মাহর সামগ্রিক অবস্থার সম্যক জ্ঞানও থাকতে হবে। এমন একটি নেতৃত্ব উম্মাহর অবস্থার পরিবর্তনের বিপ্লবের জন্য আবশ্যকীয়। এমন যোগ্য নেতৃত্ব ছাড়া উম্মাহর অবস্থা পরিবর্তনের বিপ্লব হবে - সেই আলোড়ন সৃষ্টিকারী প্রবাহের মতো, যা দ্রুতই জলাভূমিতে বিলীন হয়ে যায়।

বলিষ্ঠ ও বিচক্ষণ নেতৃত্বহীন বিপ্লবের গায়ে পরাজয়-ই লেখা থাকে। আমাদের এমন নেতৃত্ব প্রয়োজন যারা সত্যিকার বিজয় তথা ইসলামের বিজয়ের জন্য কুরবানি করবে। এমন নেতৃত্ববিহীন বিপ্লব শুরুতেই তার পথ হারিয়ে ফেলে এবং হুমকির মুখে পশ্চাদপসরণ করে। সেইসাথে প্রকৃত বিজয় তথা ‘ইসলামের বিজয়কে  উৎসর্গ করে ফেলে। 

যে বিপ্লব উপযুক্ত সময়ে তার কর্মসূচীকে ‘তীব্র সংঘাতে’ রূপান্তর করতে পারে না, সেটি এমন এক বিপ্লব যার ভাগ্যে হত্যা ও বন্দিত্বের স্বীকার হওয়াই নির্ধারিত। যে ব্যক্তি নিজেকে বিপ্লবী/ মুজাহিদ বলে দাবি করে, আবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবাধিকার সংস্থাগুলির করুণার দ্বারা স্বীয় আশা পূরণের স্বপ্ন দেখে, সে এমন এক বিপ্লবী যে একজন ভিক্ষুক এবং ভিক্ষুক থাকাতেই সে সন্তুষ্ট। 

যাই হোক।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়তের সময় থেকে এ সময় পর্যন্ত ইসলাম ও জাহেলিয়াতের মধ্যে যুদ্ধের দাবানল জ্বলে আসছে যা কখনও বন্ধ হয়নি। এটি একটি ঐতিহাসিক বাস্তবতা যা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই।

প্রথমত, এই দ্বন্দ্বের ধরণ কি রকম?

এটা এমন একটি দ্বন্দ্ব, যা দীনি দিক থেকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এটি একটি দীর্ঘ সংগ্রাম যা ইতিহাসের ধারা হিসেবে চলে আসছে এবং আল্লাহ যতদিন চাইবেন এটা ততদিন চলতে থাকবে। পশ্চিমারা সাধারণত, তাদের অনুভূতিকে গোপন করে না, কিন্তু আমাদের অনেকেই আমাদের প্রকৃত বাস্তবতা থেকে পালিয়ে থাকতে চাই।

চলমান এই বিরোধ আসলে আন্তর্জাতিক বিরোধ, স্থানীয় বিরোধ নয়। প্রকৃতপক্ষে স্থানীয় বিরোধও এই বৃহৎ দ্বন্দ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন নয়।

যেহেতু এই বিষয়টা পরিষ্কার তাই আমরা জিজ্ঞেস করতে চাই: এই আগ্রাসন প্রতিরোধের মৌলিক উপায়গুলো কি কি?

আকিদা ফিকরের সংগ্রাম

এটি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ময়দান। অসচেতনতার সুযোগে সুচিন্তিত ও পরিকল্পিতভাবে উম্মাহকে ভুল পথে পরিচালিত ও প্রতারিত করা হচ্ছে এবং উম্মাহর শক্তিশালী প্রভাবকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের সংগ্রামের এই গুরুত্বপূর্ণ দিকটিকে খোলাসা করার জন্য আমি নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলো তুলে ধরতে চাই।

প্রথম প্রশ্ন: আমাদের শত্রু কারা?

দ্বিতীয় প্রশ্ন: জীবন পরিচালনায় আল-ওয়ালা ওয়াল বারা (আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব ও আল্লাহর জন্যই শত্রুতা) এর মাসআলাকে আমরা কীভাবে গ্রহণ করব?

তৃতীয় প্রশ্ন: আমরা কাদের থেকে দিকনির্দেশনা নিবো বা কাদের অনুসরণ করবো? অর্থাৎ, জাতির দায়িত্বশীলদের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য কি হওয়া উচিৎ? 

আমাদের শত্রু কারা

নিঃসন্দেহে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে আমাদের প্রধান শত্রু হল, পশ্চিমা বিশ্বের আন্তর্জাতিক অপরাধীরা, ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও তাদের নেতৃত্বে থাকা আমেরিকা এবং তাদের অনুসারী শাসকগোষ্ঠী। 

তবে পরিবর্তিত বাস্তবতায় আমাদের প্রথম শত্রু হচ্ছে - সেক্যুলার রাষ্ট্র ও কালচারাল এলিটরা। তারা মুসলিম আমাদের দেশে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে কখনো পশ্চিমাদের আবার কখনো ভারতীয়দের ক্ষতিকর চক্রান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর। যদিও এসব রাষ্ট্র মসজিদ নির্মাণ, কোরআন হিফজ করানো, ইসলামী রাষ্ট্রের অভাবী ও অভিবাসীদের সাহায্য করে। তবে তাদের এসকল বাহ্যিক কাজ দেখে প্রতারিত হওয়া যাবে না। 

আমাদের দেশের রাজনীতি, মিডিয়া ও একাডেমিয়ার কিছু উচ্চপদস্থ ব্যক্তি এমন রয়েছে, যারা  আমেরিকা, ভারত ও তার সহযোগীদের অতিরিক্ত গুণকীর্তন করে এবং তাদের অপরাধ ও ভুলগুলোকে উপেক্ষা করে। 

২য় প্রশ্ন: ‘আল ওয়ালা ওয়াল বারা (আল্লাহর জন্যই বন্ধুত্ব আল্লাহর জন্যই শত্রুতা)’ –এর আকীদাকে আমরা কীভাবে আমাদের জীবন যাপনের পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করবো

সাধারণত, ‘আল ওয়ালা ওয়াল বারা’ এর কথা যখন বলা হয়, তখন অনেকের বা অধিকাংশের মনে কাফের, মুরতাদ, মুনাফিক ও তাদের মতো অন্যান্যদের সাথে আচরণ কেমন হবে সে বিষয়টি চলে আসে।

 আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন – 

وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرَىٰ تَنفَعُ الْمُؤْمِنِينَ

“অর্থঃ এবং স্মরণ করিয়ে দিন; কেননা, স্মরণ করিয়ে দেয়া মুমিনদের উপকারে আসবে”। (সুরা যারিয়া’ত ৫১:৫৫)

‘আল ওয়ালা ওয়াল বারা – আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব ও শত্রুতা’ এর প্রথম অংশ হলো ‘আল ওয়ালা’ অর্থাৎ আল্লাহর জন্য বিশ্বাসীদের সাথে বন্ধুত্ব বা বিশ্বাসীদের প্রতি আনুগত্য। আর এই বিশ্বাসীদের মধ্যে রয়েছে নেককার, পাপাচারী এবং বিদআতি। তাদের সকলের সাথেই বন্ধুত্ব রক্ষা করা ওয়াজিব। যখন তারা নিপীড়িত হবে, বিশেষত যদি তারা তাদের দ্বীন রক্ষার জন্যও উঠে দাড়ায়, তখন তাদের সাহায্য করতে হবে। এমনকি তারা যদি শুধুমাত্র তাদের পার্থিব অধিকার রক্ষার জন্যও উঠে দাড়ায়, তবুও তাদের সাহায্য ও সমর্থন করতে হবে।  

মুসলিম বা অমুসলিম - যাদের উপর জুলুম করা হয়েছে, তাদের সকলের পাশে আমাদেরকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে হবে। নিজেদের উপর হওয়া অত্যাচার থেকে তারা প্রতিকার পেতে চাইলে তাদেরকে সাহায্য ও সমর্থন করতে হবে। কারণ এটাই আমাদের দ্বীন। এটাই আমাদের নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত। 

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «شَهِدْتُ مَعَ عُمُومَتِي حِلْفَ الْمُطَيَّبِينَ، فَمَا أُحِبُّ أَنْ أَنْكُثَهُ، وَأَنَّ لِي حُمْرَ النَّعَمِ»

“আবদুর রহমান ইবনে আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ

আমি আমার চাচাদের সাথে মুতাইয়্যাবীনের চুক্তিতে (হিলফুল ফুযূল) শরীক ছিলাম। বহুমূল্য লাল উটের বিনিময়েও তা লঙ্ঘন করা আমার পছন্দনীয় নয়”। (মুসনাদে আহমাদ: হাদিস নং ১৬৫৫; মুসতাদরাকে হাকিম: ২৮৭০; হাদিসটি সহীহ। )

তিনি আরও বলেন যে, “আমি আব্দুল্লাহ বিন জাদ‘আনের ঘরে হওয়া একটি শপথের সাক্ষী ছিলাম। এটা আমার কাছে একপাল লাল উটের চেয়েও প্রিয়। আর যদি আমাকে ইসলামের যুগেও এমন একটি শপথের জন্য আহবান করা হয়, আমি আন্তরিকভাবে এই আহবানে সাড়া দিব।” (শায়খ আলবানী হাদিসটি সহীহ বলেছেন)

হিলফুল ফুযূল শীর্ষক চুক্তিটি ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে মক্কায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তাতে মক্কার সকল নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষকে সাহায্য করার জন্য কুরাইশিরা শপথ করেছিল।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে কুদসিতে আল্লাহর কথা বর্ণনা করে বলেন,

يا عبادي إني حرمت الظلم على نفسي وجعلته بينكم محرماً، فلا تظالموا

“হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম করো না”। (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৩৭)

সুতরাং কাউকে অন্যায়ভাবে বন্দী করে রাখা হলে, আমাদের তাকে সাহায্য করতে হবে। যে কোন শ্রমিক তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে, আমাদের তাকে সহায়তা করতে হবে। যে কোন গ্রামের অধিবাসীরা অন্যায়ভাবে প্রাপ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হলে, আমাদেরকে তাদের সাহায্যে এগিয়ে যেতে হবে। আমেরিকার দাসদের হাতে নিহত প্রত্যেক ব্যক্তির বদলা আমাদের নিতে হবে। অন্যায় আগ্রাসনের কারণে কোন মহিলা, যুবতী, এতিম বা বিধবা - অপমানিত হলে বা তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে, আমাদের অবশ্যই তাদের সাহায্য করতে হবে। এককথায় ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত প্রত্যেক ব্যক্তি, সে মুসলিম হোক বা অমুসলিম হোক – আমাদের সাহায্য ও সমর্থন পাবার হকদার।  

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের প্রতি অন্যায়-অবিচার কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। অনুরূপভাবে কোন মুসলিমকে অপমান করা, তাচ্ছিল্য করা, তাকে শত্রুর কাছে সমর্পণ করাকেও - নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, 

الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ، لَا يَظْلِمُهُ، وَلَا يَخْذُلُهُ، وَلَا يَكْذِبُهُ، وَلَا يَحْقِرُهُ

“মুসলিম মুসলিমের ভাই, সে তার উপর যুলুম করে না এবং তাকে সঙ্গীহীন ও সহায়হীনভাবে ছেড়ে দেয় না। সে তার কাছে মিথ্যা বলে না ও তাকে অপমান করে না”। (মুসলিমঃ ২৫৬৪)

ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ’র রেওয়ায়েতে এসেছে, “প্রত্যেক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার প্রতি যুলুম করে না এবং তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে না অর্থাৎ তাকে কুফফারদের হাতে সমর্পণ করে না”।  

তাই ইসলামের শত্রুদের হাতে বন্দী প্রত্যেক মুসলিমকে উদ্ধার করা আমাদের কর্তব্য। এই বন্দী নেককার, পাপাচারী অথবা বিদআতি – যাই হোক না কেন। সেক্ষেত্রে একজন মুসলিম বোন যদি তাকে কুফফারদের থেকে মুক্তি পেতে আমাদের সাহায্য চায়, তাহলে বিষয়টি কেমন হবে? 

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: 

كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ: دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ

“এক মুসলিমের রক্ত, সম্পদ ও মান-সম্মান অন্য মুসলিমের জন্য হারাম”। (মুসলিমঃ ২৫৬৪)

এই হল মুমিনদের সাথে বন্ধুত্বের অবস্থাসমূহ। বর্তমানে আল্লাহর জন্য মুমিনদের সাথে বন্ধুত্বের সাথে সাংঘর্ষিক কিছু বিষয় আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাই। মুসলিমদের কোনো কোনো দল – কখনো অন্যায়ভাবে মুসলিমদের রক্তপাতকে বা কখনো অন্যায়ভাবে সম্মানহানিকে হালাল মনে করছে। তারা মুসলিমদের সম্মান নষ্ট করছে, তাদেরকে প্রতিহতের হুমকি দিচ্ছে এবং সংগ্রামী মুমিনদের বিরুদ্ধে সাধারণ মুসলিমদের উস্কানি দিচ্ছে। সর্বোপরি ফাতাওয়া ও বিবৃতি দিয়ে এসকল কর্মকাণ্ডকে জায়েজ করার চেষ্টা করা। 

আমাদের মূলনীতি হল - সাধারণ মুসলমানদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন কার্যক্রম আমরা এড়িয়ে যাব। কারো প্রতি হুমকি দেওয়ার কিংবা বাধ্য করার অধিকার আমাদের নেই। আমাদের ও আমাদের ভাইদের মাঝে আছে কেবল (ঈমানী ভ্রাতৃত্ব রক্ষার) অঙ্গীকার, চুক্তি ও পরকালের ভয়।

আমার বক্তব্যের সারকথা হলো - আমাদের অবশ্যই নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আর নিপীড়িতরা যদি মুসলিম হয় তাহলে এই সহযোগিতার গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। আর জুলুমকারী যদি শীর্ষস্থানীয় মুরতাদ, বিশ্বাসঘাতক ও ভারতীয় বা পশ্চিমাদের দালাল হয়, তাহলে এই মাজলুমদের সহায়তা করা অপরিহার্য হয়ে দাড়ায়।

অন্যায়ের মোকাবেলা করার জন্যই সাহাবীগণ রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তাবেয়ীগণ রহিমাহুল্লাহ - উমাইয়া খেলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম মালিক রহিমাহুল্লাহ ‘খেলাফতে বনী আব্বাসের’ বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়েছিলেন। 

মুসলিম ভাইদের সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য। এই সাহায্য এই জন্য করতে হবে যেন মুসলিম উম্মাহ তার দীনি ও দুনিয়াবি বিষয়াবলীর বিষয়ে অতীতের গৌরবোজ্জ্বল অবস্থানে ফিরে আসতে পারে। উম্মাহকে সাহায্য করতে হবে - যেন তারা এসব চোরদের হাত থেকে তাদের অধিকার ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয় এবং উম্মাহর আগ্রহ ও উদ্দীপনা যেন সেক্যুলার ও কাফিরদের দ্বারা কলুষিত না হয়। 

মুসলিম জাতিকে সমর্থনের মাধ্যমে আমরা তাওহিদের আকিদা ও শরিয়াহ শাসনের সুফলের বাস্তব উদাহরণ উম্মাহর সামনে উপস্থাপন করতে পারি। আমরা উম্মাহর সামনে এই উদাহরণ রাখতে পারবো যে, পবিত্র শরিয়াহ আমাদেরকে জালিমদের প্রতিহত করা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, শূরা গঠন ও জন্মভূমিকে মুক্ত করার নির্দেশ দেয়। 

উম্মাহর সাধারণ মুসলিমরা আকীদা এবং ন্যায়বিচার ও দুর্নীতি প্রতিরোধের মধ্যকার এই যোগসূত্রটি আজ উপলব্ধি করতে পারছে। তাই তারা স্লোগান তুলেছে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ!” এ থেকে বুঝা যায় যে, মুসলিমরা অন্যায়ের প্রতিরোধে দ্বীনকে আঁকড়ে ধরছে। এইভাবে সাধারণ জনগণের ‘উপলব্ধি’ আজ ইসলামী কাজের সাথে সম্পৃক্ত অনেক দলের উপলব্ধিকেও ছাড়িয়ে গেছে।

এপর্যন্ত আমরা আল ওয়ালা তথা মুমিনদের সাথে বন্ধুত্বের বিষয়ে আলোচনা করলাম। 

আল ওয়ালা ওয়াল বারাএর দ্বিতীয় অংশ হলো - কাফিরদের সাথে সম্পর্ক ছিন্নকরন। 

মুসলিমদের শত্রুদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে এটি অর্জন করতে হবে। সম্পর্ক ছিন্নকরণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে আমেরিকা, ভারতের মদদপুষ্ট সরাসরি দালালেরা, যারা মুসলিম দেশগুলোতে বড় বড় অপরাধের সাথে জড়িত। এরা শরিয়াহর বিপক্ষে যুদ্ধ করে, সেক্যুলারিজম, অশ্লীলতা ও বিশৃঙ্খলার বিষবাস্প ছড়ায়, কাফেরদের জন্য নিজ দেশকে উন্মুক্ত করে দেয় এবং মুসলিম উম্মাহর অর্থ ও সম্পদ চুরি করে।

যারা এসকল বাস্তবতার মর্ম উপলব্ধি করতে পারে না, তারা নিশ্চিতভাবে জনসাধারণকে ব্যর্থতার দিকে টেনে নিয়ে যাবে এবং বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন করবে। 

বাস্তবতাবিবর্জিত নেতৃত্বই ‘আরব বসন্ত' ব্যর্থ হওয়ার মুল কারণ। এই বিপ্লবের নেতৃবৃন্দ তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অক্ষম ছিল। তারা শরিয়াহ’র মূলনীতিসমূহ, ময়দানের বাস্তবতা এবং কুফর ও ঈমানের মধ্যকার দ্বন্দ্বের প্রকৃত বাস্তবতা বুঝতে পারে নি। কিংবা তারা ইচ্ছে করেই তা বুঝতে চায় নি।

আর এখানেই সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি উঠে আসে যে, মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্বের, বিশেষ করে এর অগ্রগামী দলের যারা দায়িত্ব পালন করবে তাদের মধ্যে কী কী গুণাবলী থাকতে হবে? উম্মাহ যাদেরকে অনুসরণ করবে যাদের থেকে দিকনির্দেশনা গ্রহণ করবে, তাদের মধ্যে কী কী গুণ থাকতে হবে?

এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলবো – কোন ধরণের নেতৃত্ব থেকে আমরা নির্দেশনা গ্রহণ করবো এবং অনুসরণ করবো – সেটা নির্ণয় করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক আছে। এসকল নিয়ামক যে দলের মধ্যে থাকবে সেই নেতৃত্ব থেকে নির্দেশনা নেয়া যাবে এবং তাদের অনুসরণ করা যাবে। এরূপ একটি নেতৃত্ব নির্বাচনের নির্দেশকগুলোর মধ্যে রয়েছে:

** ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক শাসন করার বাধ্যবাধকতার ব্যাপারে তার অবস্থান কী? সে কি শরিয়াহ অনুযায়ী শাসন করার প্রতি দায়বদ্ধ? শরিয়াহ ব্যতীত অন্য কিছু দিয়ে শাসন করাকে কি এই দল অস্বীকার করে? শরয়ি নির্দেশনার ক্ষেত্রে ‘আপোষ করা’কে কি তারা অস্বীকার করে? 

** ‘দখলকৃত প্রতিটি মুসলিম ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে হবে’ – এই নীতিমালার ক্ষেত্রে তার অবস্থান কী? সে কি এই মূলনীতির ব্যাপারে আপোষ করে? সে কি এমন কোন মতবাদ গ্রহণ করে নিয়েছে যেখানে কোন মুসলিম ভূখণ্ড’কে দুই ভাগ করে দুই জাতিসত্তার জন্য নির্ধারণ হয়? অথচ সেখানে মুসলিমদের জন্য বরাদ্দকৃত ভূখণ্ড মোট ভূখণ্ডের ১০ ভাগের এক ভাগ। অন্যদিকে মুসলিম ভিন্ন অন্য জাতিসত্তার ভূমি, মুসলিমদের ভূমির তুলনায় ৯ গুণ বড়। 

আমাদের দেখতে হবে এই দল ও তার নেতৃত্ব কি মুসলিম ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করছে? নাকি সে তার বাহিনী, সামরিক সামর্থ্য ও ভ্রান্ত ফতোয়া নিয়ে দখলদারদের অপকর্মে সাহায্য করে যাচ্ছে?

** ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকিকরণ ও তাদেরকে স্বীকৃতি দানের ক্ষেত্রে এর দলের ও নেতৃত্বের অবস্থান কী?

** দুর্নীতিবাজ অত্যাচারী শাসক ও তাদের ভাড়াটে সৈনিকদের ব্যাপারে এই দলের অবস্থান কি? বিপ্লব পরবর্তী সময়ে এই শাসক এবং তার সাহায্যকারীদের কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে সে বিষয়ে এই দলের সুনির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা আছে কি?

** আন্তর্জাতিক পরাশক্তির অনুগত রাষ্ট্রগুলোতে যে সকল পুতুল সরকার, আন্তর্জাতিক অপরাধীদের দালাল হয়ে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে – তাদের ব্যাপারে এই দলের অবস্থান কী? এসকল পুতুল রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানদের আনুগত্য করা হবে কিনা – এ বিষয়ে এই দলের অবস্থান কি? যদি এসকল রাষ্ট্রপ্রধানরা শয়তানের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করে – তবে তাদের ব্যাপারে এই দলের অবস্থান কি হবে?

এখানে আমি গুরুত্বসহকারে আবারও মনে করিয়ে দিতে চাই যে, আমাদের চলমান এই যুদ্ধটি একটি দীর্ঘমেয়াদি সংঘাত। শতাব্দীকাল ধরে সঠিক মানহাজ থেকে বিচ্যুতির কারণেই আজ আমরা এই পরাজিত অবস্থায় এসে পৌঁছেছি।

তাই আমাদের এরূপ দায়িত্বশীল ভাইদের প্রয়োজন - যারা সামান্য অর্জনের পরই খেই হারিয়ে ফেলে না। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি কিংবা প্রলোভনের আশায় যারা আপোষ করে বা যুদ্ধ প্রত্যাহার করে – এমন নেতৃত্বের আমাদের প্রয়োজন নেই। বরং আমাদের এখন এমন নেতৃত্ব প্রয়োজন, যে সিরাতুল মুস্তাকিমে অবিচল থাকে। 

যে দায়িত্বশীলরা শরিয়াহ’র মূলনীতির ক্ষেত্রে কোনও আপোষ করে না, তেমন নেতৃত্ব আমরা চাই। এই নেতৃত্ব ইসলামের শত্রুদের মধ্যকার রেষারেষি থেকে উপকৃত হবে, কিন্তু ‘শরিয়া দ্বারা শাসনের' মতো মূলনীতিগুলোকে কোন চুক্তি বা লেনদেনের পণ্যে রূপান্তরিত করবে না। 

আমাদের এমন নের্তৃত্ব প্রয়োজন - যারা ঐক্যের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। আমাদের এমন নেতৃত্বের প্রয়োজন নেই - যে নেতৃত্ব দাম্ভিকতা, একগুঁয়েমি এবং সমালোচনা দ্বারা পরিচালিত হয়। এরূপ নেতৃত্ব বিভাজন সৃষ্টি করে, একঘরে হয়ে যায়। এভাবে এটি নিজেকে ও নিজের বিভ্রান্ত অনুসারীদেরকেও ধ্বংস করে। 

উম্মাহর সচেতন অগ্রগামী দলের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই - আমি তাদের নিকট এই বার্তা পৌঁছে দিতে চাই যে, নিশ্চয়ই আপনাদের এই সকল সমস্যার অবসান হবে। এই সমস্যাসমূহ এই পথের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই পথের পথিকদের আল্লাহ এভাবেই পরীক্ষা করেন। এটা আল্লাহর সুন্নাহ। যাইহোক, আমরা অবশ্যই আমাদের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিবো এবং এই ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি করবো না ইনশা আল্লাহ। 

সত্যিকার অর্থে আমাদেরকে যারা যোগ্য নেতৃত্ব দিতে সক্ষম, সেক্যুলারদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াগুলো কখনোই তাদের নিয়ে আমাদের সামনে আলোচনা করবে না। কখনোই তাদেরকে আমাদের সামনে উপস্থাপন করবে না। আমাদের নেতৃত্ব দেয়ার মতো যোগ্য ও আন্তরিক নেতারা হয় জেলে বন্দী অথবা ময়দানে কিংবা নির্বাসনে থাকেন।

তাগুতের সাথে চুক্তি স্থাপন, তথাকথিত ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকারীদেরও আমি প্রতিরোধে আহবান জানাচ্ছি। সেক্যুলারিজমের ভিত্তিতে নির্বাচন এবং এরকম আরও বিভিন্ন বাতিল মতবাদে বিশ্বাসীদেরকেও ভুল থেকে ফিরে এসে এই প্রতিরোধে যোগ দেয়ার আহবান জানানো আমাদের দায়িত্ব। 

হাকিমিয়্যাহ বা ‘শরিয়াহ অনুযায়ী শাসন’ – এই মূলনীতির ক্ষেত্রে আমাদের দিক থেকে যেন কোন আপোষ করা না হয়। 

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে অসাধারণ ক্ষমতা দান করেছেন। আমেরিকা, সমগ্র পশ্চিমা বিশ্ব, প্রাচ্য জোট এবং ইসলামের সমস্ত শত্রুরা একত্রিত হয়েও ঐক্যবদ্ধ মুজাহিদ মুসলিম উম্মাহকে মোকাবেলা করতে পারবে না। এজন্যই তারা আমাদেরকে দুর্বল করে রাখতে চায়। তারা চায় আমরা যেন আমাদের শক্তি ও মনোযোগ নিয়ে ফালতু অথবা ফুরুয়ি বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকি। বিভিন্ন বাতিল মতবাদ, ফুরুয়ি ইখতিলাফ ও ভ্রান্ত পথে পরিচালনার মাধ্যমে কুফফাররা আমাদের শক্তিকে নি:শেষ করে দিতে চায়। 

যদি মুসলিম উম্মাহ হাকিমিয়াহ্ তথা ‘শরিয়াহ দ্বারা শাসন’ ও জিহাদ তথা ‘আল্লাহর পথে সর্বাত্মক সংগ্রাম – এই দুই মূলনীতির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায়, তবে তখন থেকেই ইসলামের শত্রুদের পতন শুরু হয়ে যাবে। 

ইতিহাস থেকে আমরা দেখি যে,

আরব বসন্তে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিল তারা যোগ্য ছিল না। নেতৃত্বের ‍দুর্বলতা ও অক্ষমতার কারণেই, ‘আরব বসন্তে'র সময়ে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের তীব্র শক্তিকে কাজে লাগাতে তারা ব্যর্থ হয়েছিল। এই নেতৃত্ব ইসলাম বিরোধী পশ্চিমা বিশ্ব কিংবা প্রাচ্য জোটকে মোকাবেলা করে শরিয়তের উপর অবিচল থাকার কথা চিন্তা করারই সাহস পায় নি। 

আর একারণেই শুরু থেকেই, এই নেতৃত্ব ধর্মনিরপেক্ষ বা বামপন্থী দলগুলোর সাথে জাতীয় ঐক্যের নামে জোট করা শুরু করে। অথচ তারা যাদের সাথে জোট করেছে এদের অনেকের হাতই বিভিন্ন মাত্রায় নিরীহ মুসলিমদের রক্তে রঞ্জিত। উপরন্তু এই সমস্ত জোট শরিয়তকে শাসন ব্যবস্থার মূল হিসেবে গ্রহণ করেনি। ফলাফলস্বরূপ অবস্থা এমন হয়েছে যে, বৃহত্তর ক্ষেত্রে এই দুর্বল নেতৃত্ব আর কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। তাদের আত্মসমর্পণ ও দাসত্বের মনোভাবের কারণে জোটের অন্যান্যরা যা চাপিয়ে দিয়েছে তাই তারা মেনে নিয়েছে। 

সত্যি কথা বলতে, এই ধরণের নেতৃত্ব যে আন্দোলনে থাকবে সেটি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য। আরব বসন্তের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটে নি। দুর্নীতিপরায়ণ শাসনব্যবস্থার কারণে আরব দেশগুলোতে ক্ষমতায় আবার সেই জালিমরাই এসেছে। পার্থক্য হল – মাঝে কিছু সময় তারা ফোকাসের বাইরে ছিল। তবে এ সময়েও ক্ষমতা পূর্ববর্তী প্রশাসনের হাতেই কুক্ষিগত ছিল। 

আমাদের এমন নেতৃত্ব প্রয়োজন, যে নেতৃত্ব বাস্তবিকই সম্মানের প্রকৃত অর্থ বুঝে, নিজ বিশ্বাস নিয়ে যে গর্ববোধ করে এবং হতাশার অন্ধকার কাটিয়ে উঠতে পারে। আমাদের এমন নেতৃত্ব প্রয়োজন, যে নেতৃত্ব আল্লাহর আয়াতের সঠিক মর্মার্থ বুঝতে পারে: 

وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

“অর্থঃ আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে।” (সুরা আল-ইমরান ৩:১৩৯)

নিম্নোক্ত আয়াতের মর্মার্থ যাদেরকে আনন্দিত করে, তেমন নেতৃত্বই আমাদের প্রয়োজন। 

وَلِلَّهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُولِهِ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَلَٰكِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَا يَعْلَمُونَ

“অর্থঃ সম্মান (শক্তি) তো আল্লাহ তাঁর রসূল ও মুমিনদেরই। কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না।” (সুরা মুনাফিকুন ৬৩:8)

আমাদের এমন নেতৃত্ব প্রয়োজন, যারা আকিদা ও শরিয়াহ’র ক্ষেত্রে কোনও আপোষ করবে না। এমন নেতৃত্বও দেখা যায় যারা ধর্মনিরপেক্ষ, নাস্তিক, দুর্নীতিবাজ এবং নীতিহীন অপরাধীদের সাথে আপোষ করে এই আশায় যে, এই অপরাধীরা তাদেরকে কারাগার বা নির্বাসন থেকে মুক্তি দিবে কিংবা বিজয়ের ফলাফল তাদের সাথে ভাগ করে নিবে। দুনিয়াবি বিষয় প্রাপ্তির আশায় অপরাধীদের সাথে আপোষকারী এমন নেতৃত্ব আমাদের প্রয়োজন নেই। 

আমাদের এরূপ নেতৃত্ব প্রয়োজন, যারা কিনা পশ্চিমা ও প্রাচ্যের নিকট সহানুভূতি ভিক্ষা চায় না। এমন নেতৃত্বও দেখা যায় যারা আশা করে যে, পশ্চিমারা ও প্রাচ্যের অপরাধীরা তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে মুসলিম দেশগুলোতে তাদের নিয়োগ করা দালাল সরকারদের পরিত্যাগ করবে। অথচ মুসলিম দেশগুলোর এসকল দালাল সরকারদের তারাই তৈরি করেছে ও ক্ষমতায় এনেছে। এমনকি ক্ষমতা স্থায়ী করার জন্য সব ধরণের সাহায্য করে যাচ্ছে। কল্পনার জগতে বসবাসকারী ও ভুল মানহাজে পরিচালিত এমন নেতৃত্ব আমাদের প্রয়োজন নেই। 

আমাদের এমন নেতৃত্ব প্রয়োজন, যে নেতৃত্ব মুসলিম ভূখণ্ডের দখলকৃত এক ইঞ্চি ভূমিও ছাড় দিতে রাজি নয়। সম্পূর্ণ মুসলিম ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের দাবিতে অনড় নেতৃত্বই আমাদের প্রয়োজন। আমাদের এমন নেতৃত্ব প্রয়োজন, যারা জাতীয় ঐক্যের নামে মুসলিম ভূখণ্ডের কিছু অঞ্চল কিংবা পুরো দেশকেই বিক্রয় করে দেয়ার মত জঘন্য কাজের বৈধতা দেয় না।

আমাদের এমন নেতৃত্ব প্রয়োজন, যারা ইসলাম ও কুফর এর মধ্যকার দ্বন্দ্বের প্রকৃত বাস্তবতা বুঝতে পারে। অতঃপর এই বাস্তব বুঝের উপর তারা স্থির থাকে, এই বাস্তবতাকে বিশ্বাস করে এবং এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে পরিকল্পনা করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। 

আমাদের এমন নেতৃত্ব প্রয়োজন, যে নেতৃত্ব কোন চুক্তি করার জন্য কিংবা কাল্পনিক সুবিধা পাওয়ার লোভে শরিয়াহ’র শাসনকে পরিত্যাগ করবে না।  আমাদের এমন নেতৃত্বের প্রয়োজন যারা এসমস্ত দুর্নীতিবাজ, নাস্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তির সাহায্য পাওয়ার প্রত্যাশী না। 

আমাদের বিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত পরামর্শদাতা সাইয়িদ কুতুব রহিমাহুল্লাহর মত নেতৃত্ব প্রয়োজন। যিনি বলেছিলেন, 

‘যে আঙ্গুল প্রত্যেক সালাতের মধ্যে আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দেয়, সেই আঙ্গুল কোন অত্যাচারীর কাছে প্রাণভিক্ষার চিঠি লিখবে না।’

আমাদের মোল্লা মুহাম্মদ উমর রহিমাহুল্লাহর মত নেতৃত্ব প্রয়োজন। যিনি বলেছিলেন, 

বুশ আমাদেরকে পরাজয়ের ওয়াদা করেছে। আর আল্লাহ আমাদেরকে বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা দেখব দুটির মধ্যে কার ওয়াদা সত্য হয়।

আমাদের শাইখ উমর আব্দুর রহমান রহিমাহুল্লাহর মত নেতৃত্ব প্রয়োজন। যিনি তার বিচার চলাকালীন সময়ে আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন: 

আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী বিচার করুন। এর অন্যথা করলে আপনি কাফির, একজন জালিম এবং একজন পাপী।

আসুন আমরা সবাই আবার সিরাতুল মুস্তাকিমে ফিরে আসি এবং আমাদের জন্য উপযুক্ত, মুত্তাকী, জ্ঞানী, বিশ্বাসী ও একনিষ্ঠ নেতাদের বাছাই করে নেই।

আর জাতির মুক্তির প্রয়োজনে এই নেতাদের উঠে আসতে হবে সঠিক দাওয়াহ, আন্দোলন ও আত্মত্যাগী দায়িত্বশীলদের মধ্য থেকেই। 

আল্লাহ তা আলা তাওফিক দিন।